মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ভেঙেছে তিথী রয় নামের এক ভর্তি পরীক্ষার্থী। শনিবার যানজটের কারণে পরীক্ষাকেন্দ্র বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে ২৫ মিনিট দেরি হওয়ায় ওই ছাত্রীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অনুনয় করেও কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পেরে ক্ষোভে প্রবেশপত্র ছিঁড়ে ফেলে মাকে নিয়ে ববি ক্যাম্পাস ত্যাগ করে সে।
জানা যায়, তিথী রয় গোপালগঞ্জ জেলার বিরেন্দ্র নাথের মেয়ে। ঢাবি ‘খ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় তার কেন্দ্র ছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বরিশালে থাকার জায়গা না থাকায় আজ গোপালগঞ্জ থেকে মাকে নিয়ে সে ববিতে পরীক্ষা দিতে আসে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় এ পরীক্ষা শুরু হয়। তবে যানজট ঠেলে তিথি রয় কেন্দ্রের গেটে পৌঁছায় ১১টা ২৫ মিনিটে। ২৫ মিনিট আগে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় তাকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসির সদস্য এবং ববি স্টাফেরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিথী দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা কেন্দ্রর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। অনেক অনুনয়ও করেছে। কিন্তু কিছুতেই তার কথা শোনেনি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তাঁরা তিথীকে চলে যেতে বাধ্য করে। একপর্যায়ে তিথী দুই হাতে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে। তার অভিভাবক এবং আশপাশের লোকেরা বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। অবশেষে রাগে-ক্ষোভে পরীক্ষার প্রবেশপত্র (রোল: ২৭০১৫৫৪) ছিঁড়ে কয়েক টুকরো করে করে গেট ত্যাগ করে।
তিথীর মা গীতা রয় সাংবাদিকদের জানান, করোনায় দিন-রাত পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকেছে মেয়ে। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে। বরিশালে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় আজ খুব সকালে গোপালগঞ্জ থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু নগরীর চৌমাথা ও সাগরদী এলাকায় দুই দফায় যানজটে আটকে পড়ায় দেরি হয়েছে। পরীক্ষা দিতে পারলে কম সময়ে হলেও চেষ্টা করতে পারত।
জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. খোরশেদ আলম বলেন, ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা শুরু হয় শনিবার সকাল ১১টায়। পরীক্ষার্থী তিথী রয় কেন্দ্রে পৌঁছায় ১১টা ২৫ মিনিটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা হলো—পরীক্ষা শুরুর পর আর কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। কেন্দ্রে অবস্থান করা ঢাবির টিমও ওই ছাত্রীকে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিতে চায়নি।
তাঁরা আরও বলেন, পরীক্ষা হয়েছে দেড় ঘণ্টা। এর মধ্যে ৪৫ মিনিট নৈর্ব্যক্তিক এবং ৪৫ মিনিট লিখিত। ড. খোরশেদ বলেন, তিথী বাকি সময়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারত কিনা বলা কঠিন। কারণ, পুরো সময় পরীক্ষা দিয়েই তো অনেকে উত্তীর্ণ হতে পারে না। শিক্ষক নেতা খোরশেদ আলম বলেন, এ ক্ষেত্রে মানবিকতার জায়গা ছিল। কিন্তু ঢাবির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে কিছুই করা যায়নি। তা ছাড়া ওই ছাত্রীকে সুযোগ দিলে বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারত।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আধা ঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া যায়। কিন্তু পরীক্ষার্থী তিথী ২৫ মিনিট বিলম্ব করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে, পাশ-ফেল পরের কথা। বাকি সময়ে পরীক্ষা দিয়ে যে ওই শিক্ষার্থী ঢাবিতে সুযোগ পেত না তার কি নিশ্চয়তা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিতে পারে? এমন অমানবিক কাজ করা ববি কর্তৃপক্ষের ঠিক হয়নি। শিক্ষক সমাজ এ ঘটনায় লজ্জিত, দুঃখিত।
Leave a Reply